বিশ্বজুড়ে, ১০টি দম্পতির মধ্যে একটি দম্পতি বিভিন্ন ধরনের বন্ধ্যাত্বের সমস্যার ভোগেন। যখন বাংলাদেশের কথা আসে, সেখানে বন্ধ্যাত্বের হার ৪%। গত কয়েকটি দশক ধরে, বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় অগ্রগতি ঘটেছে অনেকটাই, তবে অগ্রগতির জন্য আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। এর অর্থ, আমরা এখনও বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে এখনও হতাশ হচ্ছি এবং ্নেক ধরনের ব্যাপার রয়েছে, যা একজনের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।
স্বাস্থ্যকর গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বয়স থেকে লাইফস্টাইল থেকে জেনেটিক্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিস্তারিত ডায়েট এক্ষেত্রে গর্ভধারণের একটি অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজনের অধীনে থাকে বয়স, জেনেটিক্স, অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত শর্ত বা যে কোনও ধরনের ডায়েট। কিন্তু এটা ছাড়াও ব্যালেন্সড ডায়েটে কোনো মেডিকেল হস্তক্ষেপ থাকলে হবে না- এটা পুরোটাই সাধারণ ভাবে হবে, যা আপনার শরীরকে গর্ভধারণে সাহায্য করবে। বলা যেতে পারে, ভালো এবং স্বাস্থ্যকর ডায়েট গর্ভধারণের ক্ষেত্রে একটি পরিপূরক কারণ। যদি বন্ধ্যাত্বের নির্ণীত হয়, তাহলে আইইউআই, আইভিএফ প্রভৃতির মতো হরমোনাল চিকিৎসাও দরকার।
গত কয়েক বছর ধরে সেরা ফার্টিলিটি ডায়েটের গুরুত্বের সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে এই ক্ষেত্রে আরও গবেষণা হতে দেখা যাচ্ছে এবং আরও গবেষণাপত্রে ফার্টিলিটি বৃদ্ধির জন্য সেরা খাবারগুলিও সন্ধান করতেও দেখা যাচ্ছে। এরকমই একটা গবেষণা হল হার্ভার্ডের নার্সেস’ হেলথ স্টাডি, একটি দীর্ঘকালীন প্রজেক্ট, যা পরীক্ষা করেছে ১৮০০০ মহিলার ওপর ডায়েটের প্রভাব এবং অন্যান্য কারণ নিয়ে। এই মহিলারা হয় গর্ভবতী ছিলেন নয়তো গর্ভে ধারণের পরিকল্পনা করছিলেন। এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গিয়েছে যখন আপনি গর্ভে ধারণের পরিকল্পনা করছেন, কোন খাবারটি এর মধ্যে যুক্ত করতে হবে এবং কোনটি এড়িয়ে যেতে হবে এবং সেই সঙ্গে এমনকিছু যা ইতিমধ্যেই সাধারণ মানুষ জানেন।
সাদারণ নিয়মের মধ্যে, ডায়েটের দুটি কারণ কাজ করে- পুষ্টি এবং একটি স্বাস্থ্যকর ওজন- যা গর্ভবতী হওয়ার জন্য দম্পতির মধ্যে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মার্কিন ন্যাশনাল ফার্টিলিটি অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, ৩০ % বন্ধ্যাত্বের কারণ অতিরিক্ত ওজন। ১৮.৫ – ২৪.৯-এর বডি মাস ইনডেক্সকে (বিএমআই) আদর্শ হিসেবে ধরা হয়।
তাই কোনটা সেরা ডায়েট এবং সেরা খাবার, যা আপনার বন্ধ্যাত্বের সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করবে ?
স্লো বা কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট যেমন গোটা শস্য বা বিন সুগার বা ইনসুলিনে পরিণত হতে শরীরের দ্বারা প্রক্রিয়াজাত হতে সময় নেয়। খারাপ কার্বস, যা ইনস্ট্যান্ট সুগার (যেমন কুকিজ, হোয়াইট ব্রেড, হোয়াইট রাইস) তৈরি করে, তাকে বদল করুন স্লো কার্বসের সঙ্গে, যা গর্ভধারণে সদর্থক প্রভাব ফেলে, আবার ইনসুলিন ওভিউলেশনে বাধা সৃষ্টি করে।
ফল-সর্বস্ব ডায়েট- দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত মহিলারা দিনে তিনবার বা তার বেশি ফল খান, তাঁরা অন্যান্যদের থেকে, যাঁরা মাসে একবার বা দুবার ফল খান, তাঁদের থেকে ১৫ দিন আগেই গর্ভবতী হতে পারেন। বন্ধ্যাত্বের হারে বেড়েছে ৮ থেকে ১২ শতাংশ- প্রায় অর্ধেক- এর কারণই হল মহিলাদের ফল কম খাওয়া।
সবুজ সবজির ডায়েটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা দম্পতিকে সন্তান পেতে সাহায্য করে। নন-হেম-আয়রন- যা আপনারা পান সবজি, শস্য এবং বীজ থেকে, সেটি হেম আয়রনের থেকে আরও বেশি উপকারি- মাংসে পাওয়া যায় হেম আয়রন, যা বন্ধ্যাত্বের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট– স্বাস্থ্যের জন্য সমস্ত ফ্যাট খারাপ নয়। কোনও দরকার নেই হোল মিল্কের বদলে স্কিমড মিল্ক বা চিজের বদলে লো-ফ্যাট চুজ খাওয়ার। বর্তমান গবেষণা জানাচ্ছে, আগে বিশ্বাস করা হত, মহিলারা পরিপূর্ণ ফ্যাটের দুধের প্রোডাক্ট খেলে তাঁদের গর্ভবতী হওয়ার সুযোগ বেশি থাকে।
মাল্টি ভিটামিন-সহ সাপ্লিমেন্ট– ভিটামিন হল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কারণ, যা মহিলাকে গর্ভধারণে সাহায্য করে। একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, যে সমস্ত মহিলা মাল্টি-ভিটামিন খান, ওভিউলেশন ডিসঅর্ডারের সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কমে যায়।
অ্যালকোহল, জাঙ্ক ফুড, ক্যাফিন এড়িয়ে চলুন– ডায়েট হল কী ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা এবং কী ধরনের খাবার খাওয়া তার ওপর। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন (সুগারি সফট ড্রিঙ্ক সমেত) সমৃদ্ধ বেভেরেজ গর্ভধারণে গভীর প্রভাব ফেলে। একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত দম্পতি প্রায় প্রত্যেকদিন জাঙ্ক ফুড খান, তাদের দ্বিগুণ হারে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তাই যে ভাবে হোক, গর্ভ ধারণ করতে চাইলে এই খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন।
একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট কঠোর অনুশীলনের সঙ্গে হওয়াটা খুব দরকার। যাঁরা গর্ভধারণ করতে চাইছেন, তাঁরা নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখুন। রেগুলার অথচ সামান্য ব্যায়াম আপনার গর্ভাবস্থাকে মসৃণ করবে এবং শিশুর জন্মানোর সময় যন্ত্রণাও কম হবে।