যে বিশেষ সমস্যার জন্য কোনও পুরুষের পক্ষ থেকে কোনও মহিলার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনাটি ব্যাহত হয়, তাকেই বলে পুরুষ বন্ধ্যাত্ব। এই পুরুষ বন্ধ্যাত্বের মূল কারণ হল শুক্রাণুর শক্তি কমে যাওয়া।
পুরুষটি সংশ্লিষ্ট প্রজনন প্রক্রিয়ায় উপস্থিত হতে সক্ষম কি না তা জানার জন্য অজস্র পরীক্ষা রয়েছে। তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল- সিমেন অর্থাৎ বীর্যের বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা। সংশ্লিষ্ট পুরুষের বীর্যটি সংগ্রহ করে তা গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ওই পরীক্ষাগারে বীর্যের ঘনত্ব, বীর্যের পরিমাণ, বীর্যের গতিশীলতা পরীক্ষা করা হয়। যদিও, বীর্যের পরিমাণ কম হওয়া মানেই যে পুরুষটি প্রজনন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণে সক্ষম, এমনটা নয়। বরং, এটি শুক্রাণুর উৎপাদন বা বিতরণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আপনি যদি সম্প্রতি আপনার বীর্যের বিশ্লেষণ করে থাকেন এবং সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে হয়তো আপনি এটি ভেবে কিঞ্চিৎ ভাবিত হতে পারেন যে, যে যে সংখ্যাগুলো লেখা আছে রিপোর্টে, ওগুলোর মানে কী। ব্যাপারটা একটু খোলসা করে দেখে নেওয়া যাক বরং।
নির্গত বীর্যের ঘনত্ব:
এক-একবার বীর্য নির্গত করার সময় কোনও পুরুষ গড়ে ২-৫ মিলিলিটার ঘন বীর্য নির্গত করে। যদি, এই ঘনত্বের পরিমাণ কম হয় বা তা একেবারেই না থাকে, তাহলে তার নেপথ্যে নিচের কারণগুলি থাকবেঃ
- বীর্য নির্গত করতে অপারগ।
- বীর্যের অসম্পূর্ণ সংগ্রহ।
- যে বিশেষ নালীর দ্বারা বীর্য নির্গত হয়, সেখানে ঘোরতর সমস্যা।
- ঘনঘন যৌন মিলন।
শুক্রাণুর ঘনত্বঃ
সাধারণত লক্ষ করে দেখা যায় যে, স্পার্মাটোজোয়ার ঘনত্ব প্রতি মিলিলিটারে ১৫ মিলিয়ন বা ১.৫ কোটি পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি পরিমাণ এর থেকে কম হয়, তাহলে তাকে বলা হয়- অলিগোস্পার্মিয়া। আর, যদি বীর্যে কোনও শুক্রাণুই না থাকে, তবে তাকে বলা হয়- আজুস্পার্মিয়া। যদি প্রতি মিলিলিটারে শুক্রাণুর ঘনত্ব ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লক্ষের কম হয়, তবে তা অত্যধিক পরিমাণে কম বলেই ধরে নেওয়া হয়। প্রতিদিন শুক্রাণুর পরিমাণে কিছু এদিকওদিক হতে পারে। এছাড়া, যৌন মিলনের থেকে বিরত থাকলেও তা শুক্রাণুর পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে।
শুক্রাণুর গতিশীলতা:
শুক্রাণুর গতিশীলতা শুক্রাণুর পরিমাণের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এই গতিশীলতাকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। সম্পূর্ণ গতিশীলতা (যে কোনও দিকে গতিশীল) এবং অগ্রসর গতিশীলতা (কেবলমাত্র সামনের দিকে গতিশীল)। শুক্রাণু যদি সবল এবং সুস্থ হয় তবে তা সামনের দিকেই অগ্রসর হবে। এর ফলে শুক্রাণু খুব সহজেই সাঁতরে তাদের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে যায়, যা হল মহিলাদের গর্ভাশয়৷ তারপর ডিম্বাণু নিষিক্ত করে। শুক্রাণুর গতিশীলতা ৫০%-এর বেশি হলে তা গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করে। তবে, স্বাভাবিকের থেকে কম গতিশীল হলে তাকে অ্যাস্থেনোস্পার্মিয়া বলা হয়।
স্পার্ম মর্ফোলজি বা শুক্রাণুর অঙ্গসংস্থানবিদ্যা:
শুক্রাণুর অঙ্গসংস্থানবিদ্যার মাধ্যমে শুক্রাণুর আকার এবং আকৃতির সম্বন্ধে সঠিক ধারণা করা যায়। বীর্য পরীক্ষা করে নিয়ে দেখা হয় যে, সেখানে ঠিক কত শতাংশ শুক্রাণু স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। শুক্রাণুর মাথা, শরীর এবং লেজকেও এই হিসেবের মধ্যে ধরা হয়ে থাকে। সাধারণত, শুক্রাণুর ডিম্বাকৃতির মাথা এবং লম্বা লেজ হয়। যদি শুক্রাণুর আকৃতি ঠিক না থাকে, তাহলে অনুমান করা হয় যে, কোনও বিষক্রিয়া অথবা কোনও ওষুধের প্রভাব অথবা অন্যান্য কোনও সমস্যার কারণেই এই দুর্গতি হয়েছে। এমনকি, শুক্রাণুর স্যাম্পেলে যদি ১২% স্বাভাবিক শুক্রাণু থাকে, তাহলেও সেই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলেই ঘোষণা করা হয়। আর, অতিরিক্ত পরিমাণে অস্বাভাবিক শুক্রাণু থাকলে তাকে টেরাটোস্পার্মিয়া বলা হয়।
শুক্রাণুর অস্বাভাবিকত্ব কী ইঙ্গিত করে:
যদি প্রথমবারে বীর্য পরীক্ষার পর কোনও অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ করেন চিকিৎসকেরা, তাহলে তাঁরা সংশ্লিষ্ট পুরুষকে ফের চার থেকে ছয় সপ্তাহ বাদে বীর্য পরীক্ষার নিদান দেন। এই দ্বিতীয়বারের পরীক্ষার পরেও যদি কোনও অস্বাভাবিকত্ব নজরে আসে, তাহলে সেই সমস্যাটির সুরাহার জন্য আরও বেশ কিছু পরীক্ষার নিদান দেওয়া হয়। এর মধ্যে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জীবনধারণের পদ্ধতিতে সামান্য কিছু বদল এবং ওষুধের মাধ্যমেই ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব। বর্তমানে গর্ভধারণ সংক্রান্ত চিকিৎসা এত অভাবনীয় উন্নতি করেছে যে, বিভিন্ন ধরনের বন্ধ্যাত্বকরণের সমস্যার সমাধানই অনেক সহজে করা সম্ভব হচ্ছে। এই বিষয়ে চিকিৎসা করে সুফল পাওয়ার জন্য ভালো কোনও অ্যান্ড্রোলজিস্টের সঙ্গে শীঘ্রই যোগাযোগ করুন।