টিউবাল ফ্যাক্টর, মহিলা রোগীদের মধ্যে ১০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের কারণ
শ্রীমতী শেখ (নাম পরিবর্তিত), ৩৭ বছর বয়সী, ৪ বছর আগে সেকেন্ডারি ইনফার্টিলিটিতে ভুগছিলেন, এবং ৮ বছর আগে তিনি সিজারিয়ান সেকশনে তাঁর মেয়ের জন্ম দেন। তাঁর একটি ওভারিও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দিতে হয়। এখানে আসার আগে ১৭-১৮টি ইনট্রাউটেরিন ইনসেমিনেশন (আইইউআই) তাঁর শিরার মধ্যে দিয়ে হয়েছিল। নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটিতে আসার পর এখানকার বিশেষজ্ঞরা দেখেন তাঁর টিউবাল সমস্যা হয়েছে যা তাঁর দ্বিতীয় প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরে, তাঁকে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ)-এর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি প্রথমবারেই কনসিভ করেন এবং একটি স্বাস্থ্যকর শিশুর জন্ম দেন।
নোভা আইভিএফ ফার্টিলিটিতে ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ জানিয়েছে, আমরা দেখেছি নোভা সেন্টারে যাঁরাই ফার্টিলিটির সমস্যা নিয়ে আসেন, সেই মহিলাদের ১০ শতাংশের মধ্যে ফার্টিলিটি ইস্যু রয়েছে। এই রোগীদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটির লক্ষণগুলোকে চিহ্নিত করা এত সহজ নয়। সেখানে থাকতে পারে পলিসিসটিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস) বা প্রিম্যাচিয়োর ওভারিয়ান ফেলিওর (পিওএফ), যা এমন একটি লক্ষণ যেটি একজন সতর্ক হতে পারে। সাধারণ সেখানে কোনও লক্ষণ নেই, যদি না টিউবে জলের মাত্রা বাড়তে থাকে, যেটি আবার আল্ট্রাসাউন্ডের জন্যও দরকার, যার মাধ্যমে বোঝা যাবে টিউবাল কারণ।
টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটি হল এমন একটি পরিস্থিতি, যা মহিলাদের ফেলোপিয়ান টিউব ব্লক কতরে দেয়, যা এগ এবং স্পার্মের ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতিকে বাধা দেয়। ফেলিপিয়ান টিউব এক্ষেত্রে স্পার্মকে আটকে দেয়, অনেক ক্ষেত্রে ডিম্বাণুকেও, প্রেগনেন্সির জন্য গর্ভাশয়ে পৌঁছতে দেয় না। গর্ভাশয় ফেলোপিয়ান টিউবের সঙ্গে সংযুক্ত গর্ভাশয়ের যে কোনও একটি দিক দিয়ে। এই ব্লকেজ কখনও কখনও হতে পারে ছোট, যেখানে তারা গর্ভাশয়ে ডিম্বাণুকে নয়, স্পার্মকে পৌঁছে দিতে পারে। অনেক সময় টিউবাল পেটেন্সির পরীক্ষা করলে রোগীদের মধ্যে দেখা যায়, টিউব কাজ করছে না। পেটেন্ট নন-ফাংকশনাল টিউব নির্ণয় করা অসুবিধার। এছাড়াও অন্যান্য কারণ যেমন এন্ডোমেট্রিওসিস, যেখানে গর্ভাশয়ের বাইরে কোষের বৃদ্ধি হচ্ছে বা আগে কোনও অস্ত্রোপচার, যা সেই মহিলাটির হয়েছিল, তার ফলেও টিউবার ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটি হতে পারে। পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, যেখানে মহিলাদের রিপ্রোডাক্টিভ অর্গ্যান সংক্রমিত হয়ে যায়, এর ফলেও ফেলোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এন্ডোমিট্রিওসিসে, টিউব সমস্ত ক্ষেত্রেই পেটেন্ট হয়, কিন্তু সেগুলি কাজ করতে পারে না টিউবো -ওভারিয়ান রিলেশনশিপের জন্য। অযাচিত গর্ভধারণ এবং অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডেইস সমাপ্তির ইতিহাসও একটি বড় কারণ হিসাবে দেখা দিচ্ছে।
বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে টিউবাল ব্লকের জন্য চিকিৎসা
দুরকম ভাবে টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটির চিকিৎসা করা যায়, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বা আইভিএফের মাধ্যমে। একজন অস্ত্রোপচারের রাস্তা বেছে নিতেই পারেন, যদি না ফেলোপিয়ান টিউব খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্রোপচারের পরে, পরিস্থিতি বদলাতে পারে, যা পরে গর্ভধারণ করতেও সাহায্য করবে। কিন্তু, যদি টিউব খুব খারাপভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ডাক্তাররা আইভিএফের জন্যই বলেন, এতে স্বাভাবিকভাবেই মহিলারা গর্ভধারণ করতে পারেন।
“বেশিরভাগ মহিলা যাঁরা টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটি নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, তাঁদের অবস্থা ততক্ষণে খুবই গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আইভিএফ চিকিৎসা করতেই হয়। যদিও সমস্ত কেসই আলাদা, অস্ত্রোপচারের সুপারিশ বা আইভিএফ প্রধানত রোগীর বয়স, বন্ধ্যাত্বের বছর, কতখানি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ব্লকের লোকেশনের ওপরই নির্ভর করে। কিন্তু আইভিএফ হল টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটির ওপর আশীর্বাদ, এমন কিছু চিকিৎসা রয়েছে যার মাধ্যমে টিউবকে বাদ দিয়েও গর্ভধারণ করা সম্ভব হয়।” জানিয়েছেন ডাক্তার।
টিউবাল ফ্যাক্টরের মাধ্যমে বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ করা যায় পেলভিক ইনফেকশন, মিড-ট্রাইমেস্টার ইনডিউজড অ্যাবরশন না করিয়ে, কোয়াকসের গাইডেন্স, ল্যাপারোস্কোপিক এবং সময়মতো অ্যাবডোমিনাল পেলভিক সার্জারি যেমন অ্যাপেনডেকটোমিস অধীনে প্রেগনেন্সির টার্মিনেশন না করিয়ে। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট আমাদের ইম্যুনিটি বৃদ্ধি করে এবং টিউবারকিউলোসিসের সম্ভাবনাও কম। সময়মতো চেকআপ টিউবাল ফ্যাক্টর ইনফার্টিলিটির জন্য হওয়া বিভিন্ন সমস্যাকে দূর করে। সময়মতো মেডিকেল সাহায্য ফার্টিলিটির এই সমস্যাকে দূর করবে।